কেয়া তালুকদার

কবি ও প্রাবন্ধিক কেয়া তালুকদারের তিনটি কবিতার বই বের হয়েছে; "পূর্ণতা ফিরে এসো", "ছায়ামানব" এবং কলকাতার কবি মোনালিসা রেহমান'র সাথে যৌথ বই ভালোবাসার সাতকাহন প্রকাশিত হয় ২০১৬ এবং ২০১৭ সালের একুশের বই মেলায়। ২০১৬ সালে পেয়েছেন 'সমতটের কাগজ' থেকে প্রাবন্ধিক হিসাবে পুরস্কার। ১৬ বছর আন্তর্জাতিক এনজিওতে চাকরী শেষে বর্তমানে "হেঁসেল" নামে রংপুরে একটি রেস্টুরেন্ট পরিচালনা করছেন। লেখকের লেখা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পত্রিকাতেও প্রকাশিত হয়েছে।

পুরুষতান্ত্রিক সমাজ শুধু নারীকেই শোষণ করছে না, বাড়িয়ে তুলছে পুরুষের দায়বদ্ধতাকেও

আমাদের সমাজে আদিকাল থেকেই একটি শ্রেণি শোষণ করে আসছে আর একটি শ্রেণি শোষিত হচ্ছে ৷ এর মূলে যে যাদুমন্ত্র তাহলো পুরুষতন্ত্র ৷ এর বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে নারী তার স্বাধীনতা ও স্বীকৃতি হারাচ্ছে ৷ সেই সাথে নির্যাতন ও সহিংসতার শিকার হচ্ছে এবং নিজের যোগ্যতাগুলোকে কাজে লাগাতে পারছে না ৷ এখানে নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত এমনকি উচ্চবিত্ত নারীদেরও রেহাই নাই৷ হয়তো শোষক শ্রেণি বলবেন সবাই এক নয় ৷ কিন্তু পরিসংখ্যান করে দেখা গেছে কিছু পুরুষ ছাড়া অধিকাংশ পুরুষই তাদের পুরুষতান্ত্রিকতার সুযোগ নিয়ে নারীকেই দোষারোপ করে চলছে দিনের পর দিন৷ সব কিছুতেই তাদেরই অগ্রাধিকার৷ তারাই অগ্রাহ্য করছে নারীর যোগ্যতাকে৷ পরিবারের প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করে তাই তার অন্যায় আবদার গুলোকেও মেনে নিতে হয়৷ ক্ষমতার দাপটে পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা কথা বলারও সাহস পায় না ৷ কয়টি পরিবার আছে সমঝোতার মাধ্যমে সংসার চালায়? 

যেহেতু এই সমাজ ব্যবস্থায় পুরুষ প্রধান, তাই পুরুষের দায়িত্ব আয় করা, তাই একজন বেকার পুরুষ কর্মজীবনে প্রবেশ না করা পর্যন্ত বিয়ে করতে পারে না৷ তাই ছোটবেলা থেকেই একটা চাপ থাকে পুরুষ তোমাকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে৷ এটি সাংঘাতিক ধরণের মানসিক চাপ৷ কিন্তু একজন নারী কর্মজীবি না হলেও বিয়ের পীড়িতে বসতে পারে৷ তারপর বিয়ের খরচ যোগানো, বউকে নিয়ে নতুন বাসা ভাড়া নিয়ে উঠা৷ আসবাবপত্র গোছানো৷ এখন অবশ্য নারীর বাবা-মা, যাদের সামর্থ্য আছে তারা সংসার গোছাতে সাহায্য করে৷ তারপর সন্তানদের লেখাপড়া, স্ত্রীর ও সন্তানদের ভরণপোষণ চালাতে হয় মৃত্যুর আগে পর্যন্ত৷ এজন্য কিছু পুরুষ সংসারের টাকার যোগান দিতে গিয়ে দূর্নীতি করছে৷ আবার কখনও ধরা খেয়ে জেলের ভাত খাচ্ছে৷ সন্তান বড় হলে তাদের বিয়ের ব্যবস্থা করা৷ নারী হলে তো কথাই নেই মৃত্যুর আগে পর্যন্ত শ্বশুর বাড়ীর আবদার মিটাতে হয়৷ তারপর নাতি পুতিদেরও ৷ আর যারা যৌথ পরিবারে বাস করেন তাদের মা বাবা, ভাইবোনদেরও দায়িত্ব নিতে হয়৷ অনেক পুরুষ আবার বিয়ের পর বউয়ের কথার গুরুত্ব না দিয়ে মাকে গুরুত্ব দেন৷ এটি নিয়েও সংসারে অশান্তি৷ আবার অনেকে মাকে গুরুত্ব না দিয়ে বউকে গুরুত্ব দেন৷ এটিও সমস্যা; আবার দেখা যায়, যেসব পুরুষের আয় কম তাদের প্রতিনিয়ত স্ত্রীর কাছে হেয় হয়ে থাকতে হয়৷ স্ত্রীর খারাপ ব্যবহার হজম করতে হয়৷ সব শ্রেণীর পুরুষদের মধ্যে একটা বিষয় কাজ করে তা হলো আমি পুরুষ, আমিই বাদশা৷ তাই নিম্নশ্রেণিতে স্ত্রীর ভাত রান্না করতে দেরী হলে শারিরীক নির্যাতনের শিকার হতে হয়৷ এরকম অগণিত শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন বিভিন্ন শ্রেণিতে৷ নিজের ব্যর্থতার দায় নারীর উপর চাপিয়ে দিয়ে সংসারে অশান্তি ডেকে নিয়ে আসছে৷ পুরুষদের স্বেচ্ছাচারিতা নারীকে করে তুলছে প্রতিবাদী ৷ 

একবার ভেবে দেখুন আপনারা এই তন্ত্র লালন করে কি সুবিধা পাচ্ছেন? অতএব তন্ত্রের মন্ত্র ভুলে গিয়ে নারীকে শিক্ষিত ও কর্ম করার সুযোগ দিন৷ নারীকে সন্তান জন্মদান ও লালনপালনের মধ্যে আবদ্ধ করে না রেখে তাকে বাইরের জগতের সাথে ব্যপ্তি ঘটান৷ এই নারীরাই সংসার তথা নিজের প্রয়োজন মিটিয়ে সন্তানদের মানুষ করার পিছনেও অর্থনৈতিক ভাবে অবদান রাখতে পারবে৷ এতে শুধু আপনার উপার্জনে সন্তান যতটুকু ভালো পড়াশুনা করতে পারতো তার থেকে ভালো কিছু করতে পারবে৷ দৈনন্দিন জীবনযাপনের যে স্ট্যাটাস সেটাও বদলে যাবে ৷ নারীকে নারী না ভেবে মানুষ ভাবুন৷ যেসব নারী কর্মজীবি তাদেরকেও অনেক প্রতিকুলতার মধ্য দিয়ে জীবন পার করতে হচ্ছে৷ পুরুষত্বের বড়াই না করে মানুষ রূপে নিজেকে গড়ে তুলুন৷ এই পুরুষত্বই আপনাদের দায়বদ্ধতাকে বাড়িয়ে তুলছে৷ আপনার মানসিক চাপে আপনিই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন৷ এজন্য নারীদের থেকে পুরুষরাই বেশী হৃদরোগে আক্রান্ত হয়৷ নারীর প্রতি নেতিবাচক মানসিকতার পরিবর্তন ঘটান৷ নারীর বেঁচে থাকার স্বার্থকতা হলো স্বামী আর সন্তানদের নিয়ে৷ সবার প্রতি সবার সহনশীল দৃষ্টিভঙ্গীর শুভ উদয় হোক এই কামনা করছি৷ দু‘জন মিলে আয় করে সম মর্যাদাবোধের জায়গাটা ঠিক রাখতে হবে৷

1677 times read

নারী'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত নারী'র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় নারী কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। নারীতে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।