চৈতী আহমেদ

প্রধান সম্পাদক, নারী

নারীর সমঅধিকারের পক্ষে এবং স্বাধীনতা হরণের প্রবণতার বিরুদ্ধে লিখুন


নানান চড়াই উৎরাই পেরিয়ে সমর্থন, বিরোধীতা, ঘৃণা ভালোবাসা, ষড়যন্ত্র, পরিচর্যা সব সাথে নিয়ে অন্যতম বাংলা নারীবাদী পোর্টাল নারী.নিউজ এখন তিনটি বছরের গর্বিত লড়াকু প্রজ্ঞা। থেমে যেতে পারতো আঁতুড়েই, সেই ষড়যন্ত্রও রচিত হয়েছে নারীর জন্ম লগ্ন থেকে বার বার। সেই ষড়যন্ত্র এতটাই প্রকাশ্য যে না বলে এড়িয়ে যাওয়া যায় না। অথচ নারী.নিউজ ব্যক্তিগত সখ আহ্লাদের দেখনদারী ছিলো না প্রথম থেকেই। সময়ের দাবিতেই নারী.নিউজ এর সৃষ্টি হয়েছিলো।

বাংলাদেশের নারীবাদী আন্দোলনকে একটা শক্তিশালী প্লাটফর্ম দেবার জন্য যখন নারী.নিউজ এর জন্ম হয় তখন আমার নিজের ওয়াইফাই কানেকশান ছিলো না। সেই সময় আমি ইউরোপের একটা প্রচণ্ড ঠাণ্ডা ছোট্ট শহরে নির্বাসিত। ওয়াইফাই সুবিধা পাওয়ার জন্য আমি ঘুম থেকে উঠেই বাচ্চাদের জন্য কোনো রকম কিছু খাবারের ব্যবস্থা করে দিয়ে চলে যেতাম আমার বাসা থেকে অনেক দূরে তুষারের স্তুপের ভেতর চাপা পড়া একটা কফি শপে নারী‘র সমঅধিকারের লড়াইয়ের একমাত্র অস্ত্র আমার ল্যাপটপটা সাথে নিয়ে। এক কাপ কফি নিয়ে নারী‘র সমঅধিকারের লড়াইয়ে যু্ক্ত হতাম সেই ছো্ট্ট ঠাণ্ডা শহরের ততোধিক ছোট্ট কফি শপের ওয়াইফাই এর মাধ্যমে। সেখানে বসেই নারীর কাজ করতাম দুপুর পর্যন্ত, কখনও কখনও গড়িয়ে যেতো সন্ধ্যাও। হাতে আসা লেখাগুলো এডিট করে সাইটে আপ করে আবার সেই হাঁটু সমান তুষার ভেঙে ভেঙে ফিরতাম আমার স্টুডিও এপার্টমেন্টে। যেখানে একা আমার জন্য অপেক্ষা করতো আমার ছোটো কন্যা দু'টি। সারাদিনের পর আমাকে দেখতে পেলে অভিমানে ফুলে ফুলে উঠতো ওদের নাক মুখ!

আজ নারীর জন্মদিন নয়। শুরু থেকেই নগ্ন সব বিরোধীতার মুখে নারী.নিউজকে বাঁচিয়ে রাখার পেছনেই নারী.নিউজ টিমকে এতো ব্যস্ত থাকতে হয়েছে যে আমরা নারীর কোনো একটি জন্মদিন পালনের মতো আদিখ্যেতার করে উঠতে পারি নি এই তিন বছর পর্যন্ত এখনি আমরা সেই চিন্তা করছি না। তবে এতদিনে এসে আমরা দিতে পেরেছি লেখক, পাঠক শুভাকাঙ্খীদের সমর্থন এবং প্রত্যাশার বিপরীতে নারী.নিউজের শক্ত একটা ভিত বা কাঠামো।

নারী.নিউজ এখন নতুন ইন্টারফেস নিয়ে স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি অনলাইন পোর্টাল। এর মধ্যেই নারী.নিউজ ইংরেজি ভার্সনও এখানে ক্লিক করে দেখুন ইংরেজি সাইট) যুক্ত হয়েছে নারী.নিউজ এর সাথে। আমি মনে করি এতদিনে অবশ্যই কিছুটা অভিনন্দন প্রাপ্য হয়েছে নারী.নিউজ টিমের। এর প্রধান সম্পাদক হিসেবে আমি নারীর লেখক, পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং নারীর লড়াকু টিমকে জানাচ্ছি শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন! প্রিয় লেখক, পাঠক, এবং শুভানুধ্যায়ী, নারী.নিউজের নতুন ইন্টারফেস কেমন হয়েছে মতামত পেলে আমরা উৎসাহিত হবো নারী.নিউজের মাধ্যমে নারীর সমঅধিকারের যুদ্ধটাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে।

আপনারা জানেন বাংলাদেশ নামের রাষ্ট্রটিতে দিন দিন নারীর অস্তিত্ব হয়ে পড়ছে সংকটাপন্ন। ঘরে বাইরে কোথাও নারীর নিরাপত্তা নেই। গড়ে প্রতিদিন তিন/চারটি ধর্ষণ এবং হত্যার ঘটনা ঘটছে। এই পরিসংখ্যান গণমাধ্যমে উঠে আসা ঘটনার। আড়ালে থেকে যাচ্ছে আরো অসংখ্য নারীর প্রতি সংঘটিত নিপীড়ন, সহিংসতার ঘটনা। অথচ নারীর নিরাপত্তা বিধানে সমাজ এবং প্রশাসন তাদের নিজেদের ব্যর্থতা আড়ালের জন্য নারীকেই ধর্ষণ এবং নিপীড়িত হওয়ার জন্য অভিযুুক্ত করে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে স্বেচ্ছাচারী পুরুষতান্ত্রিক এক বিচার ব্যবস্থার সামনে। নারীবাদী আন্দোলনকে জোরদার করা ছাড়া এর থেকে পরিত্রাণের কোনো পথ খোলা নেই আমাদের সামনে। পুরুষতান্ত্রিক পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র নারীবাদী আন্দোলনকে পর্যুদস্ত করার জন্য নারী‘র বিরুদ্ধে রাস্তায় নামিয়ে দিয়েছে নারীকেই। গত সপ্তাহেই পোষাকের জন্য মীম নামের এক তরুণীকে প্রকাশ্য রাস্তায় বোরকা পরা এক নারী মারধর করেছে, তার পোষাক ঐ সমাজের জন্য যথাযথ নয় বলে। তরুণীটি সালোয়ার কামিজ না পরে টি‘শার্ট পরে বাইরে আসার কারণে তাকে বোরকা পরা নারীটি টি‘শার্টের কলার ধরে অটো থেকে নামিয়ে মারধর করে। অবাক করা বিষয় হলো প্রকাশ্যে রাস্তায় এই লাঞ্ছনার ঘটনা ঘটলেও কেউ এগিয়ে আসে নি তরুণীটিকে সাহায্য করতে। তরুণীটি পরদিন তার মা‘কে সাথে নিয়ে মামলা করার জন্য থানায় গেলে, থানা মামলা নিতে অপারগতা প্রকাশ করে। এই ঘটনার মাধ্যমে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের ক্রীড়নকেরা নারীর জন্য একটা ভয়ের সংস্কৃতির প্রচলন করার চেষ্টা করছে এটা সুস্পষ্ট। প্রশাসন তার সমস্ত ব্যর্থতা নিয়ে সহযোগীতা করে যাচ্ছে কতিপয়ের এই অসুস্থ প্রবণতাকে। এই স্বেচ্ছাচারী প্রবণতার বিরুদ্ধে নারীবাদীদেরকেই যার যার অবস্থান থেকে সোচ্চার হতে হবে। প্রতিবাদ জানাতে হবে।

নারী.নিউজ এ লিখুন, নারীর জন্য লিখুন। নারীর অধিকার এবং স্বাধীনতা হরণের প্রবণতার বিরুদ্ধে লিখুন। নারী‘র সমঅধিকারের লড়াইয়ে নারী.নিউজের সহযোদ্ধা হয়ে উঠুন। নারী এবং নারীবাদ বিষয়ক প্রবন্ধ, কলাম, নারীর সাম্প্রতিক লড়াই, মুক্ত আলোচনা, আন্তর্জাতিক নারীবা, বই আলোচনা, রাজনীতি, সমাজ/গবেষণা, নারীবাদের পথিকৃত নারীদের জীবনী, নারীবাদী সিনেমা বা নাটকের আলোচনা, সাম্প্রতিক ঘটে যাওয়া বা আলোচিত নারীবিষয়ক যেকোনো ঘটনা এবং নারী‘র সাহিত্য- গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ, রম্য, উপন্যাস, সমালোচনা, আইন/সালিশ বিষয়ক যেকোনো লেখা বাংলা অথবা ইংরেজিতে লিখে পাঠান নারীর ই-মেইল-  editor@nari.news এই ঠিকানায়। লেখার সাথে আপনার সংক্ষিপ্ত পরিচিতি এবং একটা ছবি দিতে ভুলবেন না।

নারী‘র নিজের জীবনের সফলতা/সংগ্রামের গল্পটাও লিখে পাঠাতে পারেন নারী.নিউজের বিশেষ বিভাগ ‘ওলো সই‘তেপ্রিয় লেখক, নারী.নিউজের যে কোনো বিভাগের জন্য  আপনার লেখাটি হতে হবে নূন্যতম ৫০০ শব্দের এবং ওয়ার্ড ফাইলের মাধ্যমে লেখাটি পাঠাতে হবে।

2654 times read

নারী'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত নারী'র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় নারী কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। নারীতে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।